এহেম! ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩… “বালাগুল আর আমি” স্মৃতিলিখন ডায়েরি।
বালাগুল চ্যানেলে আমার জয়েন হওয়াটা কেন-কবে-কীভাবে এসব প্রশ্নের কোনো উত্তরই আমার স্মরণে নেই। তবে চ্যানেলে জয়েনের কিছুদিন পরে থেকেই চ্যানেলটা পিন করা থাকতো এবং চ্যানেলের প্রতিটা মেসেজ আমি পড়তাম। ফিতরাতগত ভাবে বরাবরই ছিলাম আমি খুব কৌতূহলী আলহামদুলিল্লাহ্, বালাগুলে এর পোস্টে যখন কিরআত, ইযাযাহ এগুলো দেখতাম আমার অনেক আগ্রহ লাগতো জানার। আমি মনে করতাম কিরআত তো হচ্ছে স্কুলে থাকতে কুরআন তিলাওয়াত করতাম তখন সেটাকে কেরাত বলা হতো তাহলে এখানে কিরআতে আবার এত ডিটেলস কি আছে! আবার রিওয়ায়াহ, শাতিবিয়াহ হেন তেন এত কিছু ও আছে! আল্লাহু আকবার, এতটুকু শুধু মন পর্যন্ত থাকতো। মেসেজ পড়ে ভাবতাম শুধু, কোথাও জিজ্ঞেস করার কেউ ছিল না আমার। পাবলিক কমেন্টে জিজ্ঞেস করতেও ভয় লাগতো। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই “এত প্রশ্ন কেন/কোথা থেকে পান” এই রকমের বার্তা পেতাম অধিকাংশ সময়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই। প্রশ্ন কি মানুষ যেচে আনে? কারো তো এমনিতেই মনে উকি দিতে পারে এটা বুঝানোর সুযোগটুকু অনেকেই দিতে চাইতেন না। যাই হউক, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে বালাগুল থেকে ফ্রি কয়েকটা তাজউইদ ক্লাস হয়েছিল যতটুকু মনে পড়ে আর আমার অনেক ইচ্ছা ছিল ক্লাসগুলো করার। কিন্তু একটা ক্লাস ও আমি নানান সমস্যার কারণে করতে পারি নি। তারপর বালাগুলের ২ বছরের প্রোগ্রামে লাইভে কিছু সময় ছিলাম, পরে বের হয়ে যাই। পরে আবার প্রোগ্রামের রেকর্ড পাওয়ার জন্য ছটফট করছিলাম। ওই প্রোগ্রামের রেকর্ড কিছু সময়ের জন্য চ্যানেলে দেওয়া হয়েছিল আলহামদুলিল্লাহ্, আর সুযোগ পেয়েই আমি পুরোটা প্রোগ্রামের রেকর্ড শুনি। ওই রেকর্ডে উস্তাযার শাইখা উস্তাযার ব্যাপারে হয়তো কিছু একটা চমৎকার কথা বলেছিলেন, কথাটা আবঝা মনে থাকলেও শাইখার কথাটা শুনার পরে উস্তাযার হাসি শুনে আমার অনেক ভালো লেগেছিল। দ্বীনি কোনো ক্ষেত্রে কোনো স্টুডেন্ট আর উস্তাযার এরকম ক্লোজ আর ফ্রি সম্পর্ক আদৌ হতে পারে? এটা ভেবে ভেবে সুবহানআল্লাহ, শুধু মনে হতো এমন ও সম্ভব! দুনিয়াবি ক্ষেত্রে তো আমার ও টিচারদের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল আলহামদুলিল্লাহ্, কিন্তু তাও মনে হচ্ছিল কি একটা অভাব! আল্লাহু আকবার! ঐদিনের রেকর্ডিং প্রোগ্রামে উস্তাযা আর উনার শাইখার আলাপ শুনে আমার অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল আলহামদুলিল্লাহ্, বারাক আল্লাহু ফিকুম। তারপর থেকে আমি আরো বেশি করে বালাগুলের পোস্টগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। ফেইসবুকে থাকাকালীন উস্তাযার আইডি ও আমার টাইমলাইনে বারবার আসতো। আর আমিও একদুই দিন আইডিতে ঢুকে উস্তাযার প্রোফাইল মনের মতো করে দেখছিলাম। এটা সিক্রেট, কেউ জানেন না। শুধু আমি আর আমার রব। স্মৃতি হিসেবে লিখতেই লজ্জা লাগছে এখন! তারপর চ্যানেলে উস্তাযার স্টুডেন্টদের মেসেজ পড়েও অনেক ভালোলাগতো, মনে হতো উস্তাযা যেমন উনার উস্তাযাদের সাথে ক্লোজ ঠিক তেমনি হয়তো উনার স্টুডেন্টরাও উনার সাথে ক্লোজ। এবার আরো আগ্রহ বাড়তে থাকল আমার আলহামদুলিল্লাহ্। এরই মধ্যে বালাগুলের তাহাজ্জুদ প্রোগ্রামও শুরু হলো, ওইটা ছিল খুব সম্ভবত দ্বিতীয় তাহাজ্জুদ প্রোগ্রাম। কিন্তু ফর্ম সাবমিট এর টাইমিং ম্যানেজ হচ্ছিল না যার কারণে অনেক আগ্রহ নিয়ে শুরু করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয় নি আলহামদুলিল্লাহ্। এরই মধ্যে তাহাজ্জুদ প্রোগ্রাম গ্রুপ থেকে লিভ নিতে চাচ্ছিলাম কারণ আমার সাথে ফর্ম সাবমিট এর টাইমিং না মিললে আমি থেকে কি করবো গ্রুপে এটা ভেবে। তবে লিভ নিতে গিয়ে ও লিভ না নিয়ে গ্রুপে থেকে যাই আলহামদুলিল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা আমার রবের, আর আল্লাহ তো উত্তম পরিকল্পনাকারী। উনার বান্দাদের জন্য একদমই বেস্ট বেস্ট পরিকল্পনা করেন আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহু আকবার, ২০২২ এর শেষের দিকে আবার তাহাজ্জুদ প্রোগ্রাম শুরু হয়। যে প্রোগ্রামের উইনারদের জন্য পুরস্কার হিসেবে ছিল বালাগুলের ১ বছরের তাজউইদ কোর্স সম্পূর্ণ ফ্রি। আগের বারের মতো এবারও আমার তাহাজ্জুদ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের খুব ইচ্ছা হচ্ছিল, এর একটাই কারণ ছিল আমার তাহাজ্জুদে নিয়মিত হওয়া, আমার অভ্যাসটা ফিরিয়ে আনা। আল্লাহর কুদরতে একজন আপুর উসিলায় আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্ তার উত্তম ব্যবস্থা করে দেন। আর আমার মনে পড়ে ওই দিনের কথা যেদিন তাহাজ্জুদ প্রোগ্রামের প্রথম দিন ছিল, আল্লাহু আকবার। ওজু পড়ে তাহাজ্জুদে দাড়াতে পারবো কিনা সেটা যখন অনিশ্চিত তার মধ্যে ওজু পড়ে সালাতে দাড়াতেই কাঁদতে কাঁদতে আমার অবস্থা! আল্লাহু আকবর, ঐ সময়ে তাহাজ্জুদ আমার কত প্রয়োজন ছিল আমি লিখে বুঝাতে পারব না, চারপাশের কঠোর অবস্থানে জীর্ণ শীর্ণ আমি! বালাগুল হলো আমার সেই সময়ের সাথী। হতাশা যখন আমাকে গ্রাস করবে ঠিক তখনই রবের অনুগ্রহ। আমি বারবার চাইলেও তাহাজ্জুদ আদায় করতে উৎসাহ পেতাম না, একটা কাফেলায় যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছিলাম আলহামদুলিল্লাহ্। ওইদিনই তাহাজ্জুদের সেজদায় আমি কাদছিলাম কেন আমি নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তে পারি না! কেন আমি এমন আজ.. কেন! কেন! কাদতে কাদতে মনে হচ্ছিল নিজের সব অশান্তি একেবারে বের করে দিতে চাচ্ছি। আল্লাহু আকবার ওইদিন কাঁদতে কাঁদতে সেজদায় মুখ থেকে আমার বের হয়ে যায় এমন একটা বাক্য “ইয়া আল্লাহ, এই বালাগুলের শিক্ষক আমার চাই। আপনি উনাদের প্রত্যেককে কবুল করুন।” আমি ভাবি নি এই প্রোগ্রামে আমি উইনার হতে পারব কারণ অসুস্থতা, নানান চিন্তা, পরিচিত কিছু কাছের মানুষ চিনতে পারার কষ্ট, পেরেশানি আমাকে এতই দুর্বল করেছিল কিন্তু সব যেখানে অনিশ্চিত আমার রব, আমার অভিভাবক এর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। এরই মধ্যে তাহাজ্জুদ প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার দিন আসলো, ১৭ দিন পর ফোনে ঢুকার পরে দেখি রেজাল্ট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহু আকবার, নন প্রেক্টিসিং ফ্যামিলিতে যখন অ্যাকাডেমিক কোনো কোর্স কিনতে চাইলে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই সহজে কিনে দেওয়া হয় সেখানে নামমাত্র দামের একটা ইসলামিক বই কিনতে গেলেই নানান কথা হাজির করানো হয় আলহামদুলিল্লাহ, সেখানে এক বছর মেয়াদী লং কোর্স আমি মাসিক ফি দিয়ে করতে পারব সেই অনুকূল পরিস্থিতি এখনও আমার তৈরি হয় নি, আর কল্পনায় তো আসেই না! আমার দয়াময় রব, আমার ভালোবাসা। তাহাজ্জুদ এর মধ্যে মুখ ফুটে বের হয়ে যাওয়া কিছু কি বিফলে যায়? বারাক আল্লাহু ফিকুম। আমার পরিবারের কেউ এখনো জানেন না আমার এই তাজউইদ জার্নি! জানানোর অনেক ইচ্ছে; কিন্তু দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত কোনো পুরস্কার, কোনো কোর্সের কথা জানানোর তৌফিক হয় নি এখনো। লিখতে গিয়ে ও চোখে পানি আসছে। ইয়া রব! আপনি আমার আম্মু আব্বুকে, আমার পরিবার, আমার আত্মীয় স্বজনদের হেদায়াত দিন।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। ডিসেম্বর ২০২২ এর ২৪ তারিখ শুরু হলো আমাদের ক্লাস। প্রথম ক্লাস থেকেই ভিন্নরকম ভালো লাগা কাজ করে। ধীরে ধীরে উস্তাযা, ক্লাস, ব্যাচমেট বোনেরা, দায়িত্বরত বড় আপুরা, সর্বোপরি আমাদের ব্যাচই আমার এত ভালোলাগার হয়ে উঠে আল্লাহু আকবার। মাত্র দেড় মাস যেতে না যেতেই মনে হয়েছে এই ব্যাচের সাথে আমার সম্পর্ক কত পুরাতন, উস্তাযা আমার কত পরিচিত, কত আগের সম্পর্ক, ব্যাচমেট বোনদের মনে হয় অনেক দিন ধরে চিনি আল্লাহু আকবার। আমার উস্তাযা, আল্লাহ্ আপনাকে নেক হায়াত দিন। উস্তাযা যখন চ্যানেলে কোনো ব্যাচকে নিয়ে কিছু বলেন, আমার ইচ্ছা জাগে কোন ব্যাচের উনারা, কোন ব্যাচের স্টুডেন্টদের উস্তাযা এরকম ভালোবাসেন! শুধু জানতে ইচ্ছা করে, মনে হয় উস্তাযা যাদের ভালোবাসেন উনাদেরকে আমিও ভালোবাসব, উনাদেরকে চিনে রাখি। আল্লাহ সবার রিযিকে বারাকাহ দিন। আমার খুব সহজে কারো প্রতি ভালোবাসা জন্মায় না, আমি ভালোবাসা প্রকাশে খুব অক্ষম, খুব বেশি ইন্ট্রোভার্ট। আল্লাহু আকবার, ওয়াল্লাহি যে আমি কেউ ভালোবাসি বললে জিজ্ঞেস করতাম “ভালোবাসা বুঝা যায় কিভাবে”। এখন আমি বুঝতে পারছি আসলেই সত্যিকার ভালোবাসাটা কি। আমি জানি না উস্তাযার প্রতি আমার ভালোবাসায় কোনো ত্রুটি আছে কিনা, কিন্তু উস্তাযার খুঁজ না পেলে, উস্তাযার মেসেজ না পেলে, উস্তাযা অসুস্থ হলে; খুঁজ না মেলা পর্যন্ত, সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি মিলে না। উস্তাযাকে অনেক বেশি মিস করি, হুটহাটই উস্তাযার কথা মনে পড়ে। আমি মিস করি একদিন উস্তাযা আমাকে ক্লাসে নাম ধরে ডেকেছিলেন, উফ! ওয়াল্লাহি! সব শিক্ষকদের কাছ থেকে নিজের নাম ধরে ডাক শুনাটা স্টুডেন্টের জন্য সূকুন হিসেবে কাজ করে। সেখানে কুরআনের শিক্ষক যদি হোন! ওই একদিনের ডাকটা অনেক বেশি মিস করি, মাঝে মাঝেই ওই ডাকটা কানে বেজে উঠে ” … আছেন? …? ” (খালি জায়গায় নাম)। আর আমি বলেছিলাম, জ্বি উস্তাযা আছি! ইয়া রব, আলহামদুলিল্লাহ্ কিন্তু ওই ডাকটা আমি মিস করি অনেক।
আমার উস্তাযাকে মিস করার সাথে সাথেই মেসেজ করতে মন চায়, কিন্তু হুটহাট ইনবক্সে মেসেজ দিতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে, যদি আদবের খেলাপ হয়ে যায়! যদি বেয়াদবি হয়ে যায়! যার কারণে মেসেজ করাও হয় না, গ্রুপেই জিজ্ঞেস করে জেনে নেই।
ভালোবাসি উস্তাযা…
এখন উস্তাযার সাথে লাইভ ক্লাস অফ কিছুদিন, আরো বেশি মিস করছি উস্তাযাকে। লাইভ ক্লাসের ছুটিতে উস্তাযার সাথে প্রতি স্মৃতি যাতে না ভুলি সেজন্য “বালাগুল আর আমি” নামে শুরু করেছি স্মৃতিচারণমূলক ডায়েরি লেখা।
আজকে ১৭ ফেব্রুয়ারি, উস্তাযা অসুস্থ। উমরাহ ফ্লাইট রিশিডিউল করতে হয়েছে অসুস্থতার জন্য। ইয়া রব, আমার উস্তাযাকে সুস্থতা দান করুন। উনার উমরাহ সফর আপনি সহজ করে দিন, উনাকে কবুল করুন।
আলহামদুলিল্লাহ আজকে উস্তাযার লাইভ ক্লাসে উস্তাযার কাছ থেকে অনেক গল্প শুনেছিলাম, মনে হচ্ছিল শুনেই যাই শুধু। কিন্তু কথা বলার সাহস আর হয় নি, অন্য আপুরা কি সাবলীলভাবে কথা বলেছিলেন, আর আমি! লাইভের আড়ালেই মুচকি হাসছিলাম…
আলহামদুলিল্লাহ উস্তাযা ওয়েলকাম ব্যাক। আবার ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রেগুলার ক্লাস ইয়েএএএ ইন শা আল্লাহ। কিউত…
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যদি হক আদায় করতে না পারি! আমি যদি আদব রক্ষা করতে না পারি! উস্তাযা যদি আমাকে অনেক ভালোবাসতেন! উফ..
আজকে ২৪ ফেব্রুয়ারি উস্তাযার সাথে পরিচিতির ২ মাস হলো আলহামদুলিল্লাহ। ইয়া আল মুজিব! এই উস্তাযা স্টুডেন্টের সম্পর্ক দুনিয়া ও জান্নাত পর্যন্ত কবুল করুন। এখন আড়ালে থেকেও উস্তাযার ক্লাসে মুচকি হাসি আলহামদুলিল্লাহ, উনাকে সামনে পেলে উনার সামনে বসে একটা ক্লাস.. কেমন হবে সেটা? হাত পা কাঁপতে কাঁপতে ঠান্ডায় ঘাম বের হবে? দুনিয়ায় যাই হউক, জান্নাতে কিন্তু উস্তাযার পাশে বসে মন প্রাণ জুড়ে উস্তাযার গল্প শুনব ইন শা আল্লাহ। তখন কাঁপাকাঁপি ও থাকবে না, ভয় ও না! আল্লাহ! অন্য বোনেরা ও এসব প্ল্যানিং হয়তো করে ফেলেছেন! “উস্তাযা গেটুর আয়োজন করছেন আর আমরা মারামারি লেগে যাব কে আগে যাবে? কে বেশি আদর পাবে? কে আগে জড়িয়ে ধরবে? কেউ কেউ আবার আপনারা এসব ক্রেন আর এই ফাঁকে আমি দৌড়ে চলে যাব উস্তাযার কাছে হাহা! বারাক আল্লাহু ফিকুম।”
এইভাবেই চলতে থাকলো আমাদের পথচলা। দেখতে দেখতে গুটি গুটি পেয়ে তিন মাস, চার মাস ও চললো।
প্রথমে ইতি ঘটলো আমাদের প্রাক্টিস ক্লাসের। প্রাক্টিস ক্লাসের তিনজন আপু যারা আমাদেরকে সবসময় সাহায্য করেছেন। জান্নাত আপুর কাছে আমি পড়া দিতাম, এত ভয় পেতাম.. আপুর “মা শা আল্লাহ, আল্লাহুম্মা বারিক” অনেক মনে পড়ে। নেহা আপু একজন সিরিয়াস মানুষ মনে হতো, কিন্তু ধারণা পাল্টে দিলেন আপু। অনেক মিশুক উনি। বড়াপু, আদর.. আরেকজন আপু, আমার জমজ! এক দেহ দুই প্রাণ মনে হয়। বালাগুলে যখন আমি নতুন, হাজার প্রশ্ন মুখ ফুটে ব লার আগেই এই মানুষটা বুঝে যেতেন। উনার নাম নিলাম না! আবেগ 👀 বারাক আল্লাহু ফিকুন্না। আরেকজন এডমিনের কথা না বললেই নয়, তাহিরাপু! কুটু একদম। মেসেজ দিলে মনে হয় সামনাসামনি প্রতিক্রিয়া। মনে হয় না অনলাইন এ কথা বলছেন। আল্লাহ আপুদের বারাকাহ দিন।
আমাদের প্রাক্টিস গ্রুপ ছিল সিফাতপ্রেমী, মাখরাজপ্রেমী, তিন সখিনাপ্রেমী (লাম, মীম, নুন) , আর্টশিল্পী, রন্ধনশিল্পী, বেকিং, ছন্দময়ী, ছন্দরাণী, আরবী ভাষাবিদ, বাংলা ভাষাবিদ, বিড়াল প্রেমী, দইকেকাপু, মেসেজ সিনার, লাইকাপু, লাভাপু, স্কিন কেয়ারপা, প্রফাইলদাতা আর মাখরাজ সঙ্গীদের মিলনমেলা:’) মিস করি…. আল্লাহ তাআলা আপনাদের প্রত্যেকের কল্যাণকর গুন বাড়িয়ে দিন।
একে একে ঘনিয়ে আসলো লেভেল ১ এর ইতি টানার সময়! দরজায় কড়া নাড়ল আমাদের পরীক্ষা। তাতে কি? পরীক্ষা তো আমরা দিবই ইন শা আল্লাহ। এবার আমাদের প্রয়োজন এক রকমের জামা আর এডমিট কার্ড। অনলাইন কোনো পরীক্ষায় কোথাও এডমিট কার্ড দেওয়া হয় কিনা জানি না, তবে আমাদের ব্যাচের হাত ধরে উদ্বোধন হলো “অনলাইন তাজউইদ পরীক্ষার শুভ্রতার ছোঁয়ায় স্বস্তির এডমিট কার্ড।” পরীক্ষার আগেভাগেই আমরা জুম প্রোফাইল এ এডমিট কার্ড বসিয়ে দেই। প্রথম কুরআনের পরীক্ষা, স্পেশাল! রিটেন পরীক্ষা প্রায় ৪ ঘণ্টা! জীবনের এত বছরে ৪ ঘণ্টার পরীক্ষা এটাই প্রথম। তারপর এলো ভাইভা। ভাইভা তে মানুষ ভয় পায়। আর আমরা ছিলাম সেজে গুঁজে ভাইভায় হাজির। ভাইভা বোর্ডের অন্যতম পরীক্ষক আর আমাদের ভাইভা ভিডিওতে ভয় যেখানে লাগার কথা, সেখানে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন।
আলহামদুলিল্লাহ, এইভাবে আমাদের লেভেল ১ কমপ্লিট হল। পেয়েছি কিছু অমায়িক বোনকে, হারিয়েছি এক কোর্সে থাকা কিছু বোনকে, পেয়েও আগলে রাখতে পারি নী অনেককে, অনেকের ভালোবাসাটাও হয়তো বুঝি নী!
🔸বালাগুল এর স্টুডেন্ট হিসেবে যা না বললেই নয় –
ওয়াল্লাহি, বালাগুল এমন একটা প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে তাজউইদ উপলব্ধি করা সম্ভব। বালাগুলে আসার আগে একজন আপুর কাছে কায়দা+তাজউইদ সহীহভাবে আবার পড়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ্। আমার প্রিয় আপু ও অনেক ভালো পড়িয়েছেন, আপুর দ্বারা আমি মোটামুটি শুদ্ধভাবে পড়াগুলো শিখেছিলাম। তবে উস্তাযার থেকে শিখেছি তাজউইদে ডুব দেওয়া। শিখেছি আদব। শিখেছি সঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত থাকা। আমার গলার সুর ভাঙা ভাঙা একটু। প্রথম প্রথম যখন আমি পড়া দিতাম আমার আওয়াজ শুনা যেত না পরিষ্কারভাবে। টিপস হিসেবে পেলাম, ঠান্ডা কম খাওয়া। অথচ আইস্ক্রিম আমার এত্ত পছন্দের ” আমাকে আইস্ক্রিম আর সুগন্ধিবিহীন পুষ্প বিলাও, আমি ভালোবাসা বিলাব।” কোথাও যাব আইস্ক্রিম খাবো না এমন কম হয়! কেউ কিছু আনবে কিন্তু আইস্ক্রিম আনবে না এমন ও কম হয় আলহামদুলিল্লাহ্। সেদিনের পর থেকে ছিলাম রেস্ট্রিকশন জোনে। ক্লাসের ছুটি যখন দীর্ঘ হতো সেটা হতো আমার জন্য খুশির কারণ আমি এবার আইস্ক্রিম খাবো। দেখা যেত ছুটির ঘোষণা আসার আগেই বিকেল থেকে আমার আইস্ক্রিম খাওয়া শুরু হতো.. আলহামদুলিল্লাহ্। প্রিয় জিনিসের জন্য পছন্দের জিনিস একেবারে পরিত্যাগ না করে একটু একটু করে পাশ কাটানোর চেষ্টায়! কারণ, আমার সুর টা পর্যন্ত সেনসেটিভ। অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়। জান্নাতে আমার একটা ইয়া বড় সুগন্ধিবিহীন ফুলের বাগান হবে আর আইস্ক্রিমের বাগান হবে। জান্নাতী ফুল আর আইস্ক্রিমের মধ্যে সেই বাগানের রাণী; দয়াময় রবের বান্দা! সুকুন ওয়ালা দৃশ্য হবে ইন শা আল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসুন উস্তাযা। ক্লাসে উস্তাযা সবসময় আদব এর কথা বলেন। আর ক্লাসের মাঝে থাকে উস্তাযার নাসিহা। উস্তাযা আমাদের প্রতি ছিলেন কেয়ারিং, ছিলেন স্নেহশীল। অমনোযোগী হলে যেমন শাসন করতেন, তেমনি ভালোবাসার ও কমতি ছিল না। উস্তাযার ভালোবাসা ও অদ্ভূত, বাইরে শক্ত ভিতরে নরম। কারো ওজর থাকলে সেটা অনায়াসে কেমন কেমন জানি মেনে নিতেন। ভাবতাম, এই মানুষটা এত অদ্ভুত কেন! সবার চিন্তা ধারার বাইরে। উস্তাযার রাগ অভিমান ও অদ্ভুত হিহি, একবার হঠাৎই গ্রুপের মেসেজ অপশন অফ করে দিয়েছিলেন। আর আমাদের চিন্তা! হায় আল্লাহ, এই গ্রুপে মেসেজ না করলে আমাদের খাওয়া হজম হয় কম এখন কি হবে!👀 বালাগুলের ক্লাসগুলো আসলেই স্পেশাল। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। নিয়মিত হোমওয়ার্ক দেওয়া, অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া, সিনিয়র আপুদের সাথে প্রাক্টিস ক্লাস, সহপাঠী বোনদের সাথে গ্রুপ স্টাডি, টপিক শেষে কুইজ, রিটেন পরীক্ষা, ভাইভা পরীক্ষা এমনকি অ্যাটেনডেন্স পর্যন্ত গণনা করা হয় ; সবমিলিয়ে একটা ছাড়লে ফাইনালে ধরা খাওয়ার চান্স রয়ে যায়! এইখানের প্রত্যেকটা কথা মন থেকে বলা। এটা শুধু রিভিউ না, এটা এতদিনের অভিজ্ঞতার মিশ্র সঞ্চয়।
আমি এখনও অনড়। আমার মাখরাজ এ সমস্যা, তিলাওয়াতে সমস্যা আলহামদুলিল্লাহ্ আলহামদুলিল্লাহ্। নিজের মধ্যে বিনয় আর আদবের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি অনুভব করি। প্রত্যেকের কুরআনের সাথে পাড়ি জমানো পথ মৃত্যু অবধি ইন শা আল্লাহ। এই পথের যাত্রী হিসেবে যারা আসবে সবার সাথে সম্পর্ক থাকুক আর নাই থাকুক, অন্তত কাউকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না। দুঃখ, কষ্ট, বিপদ আর সুখের সম্মিলিত এক যাত্রা। যে যাত্রা শেষ হওয়ার নয়, যে যাত্রায় পরাজয়ের ভয় নেই। আছে রবের সন্তুষ্টি, এক হরফ উচ্চারণে দশ নেকী, বারবার ভুলেও দ্বিগুণ নেকী, কিছু অদ্ভুত মানুষের শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য একে অপরের প্রতি জমানো ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য করা কাজের সাক্ষী হওয়া, আর গোপনে নিরবে নিভৃতে একে অপরের জন্য বেশি বেশি দুআ আর ক্ষমা!! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা অঢেল বারাকাহ দিন। যাবতীয় বদনজর, হিংসুকের হিংসা, বিদ্বেষ থেকে হেফাজত রাখুন।
জাযাকিল্লাহু খাইরন ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরহ উস্তাযা। লাবু লাবু… উস্তাযা জেনে, না জেনে, ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় কষ্ট দিয়ে থাকলে বা বেয়াদবি করে থাকলে অনুগ্রহ করে মাফ করে দিবেন। দুআতে রাখবেন উস্তাযা, আল্লাহ যেন ভালো ছাত্রী বানিয়ে দেন আমাকে।